প্রস্তুতি নেয়ার আগে আরো কি কি ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার সেই ব্যাপারে আগের পর্বে বলেছিলাম। আশা করি কিভাবে মাইন্ড সেট করা যায় তার কিঞ্চিৎ ধারণা পেয়েছেন। এই পর্বে আসল প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলব।
টেকনিক্যাল নাকি সফট স্কিল
চাকরীর জন্য মুলত ২ ধরনের দক্ষতা বা স্কিল লাগে। টেকনিক্যাল স্কিল আর সফট স্কিল। আমরা যারা টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডে আছি তারা মাঝে মাঝে একটা ভুল ধারণা পোষণ করি। সেটা হচ্ছে “টেকনিক্যালি সাউন্ড হলেই আমার জব হয়ে যাবে"। অনেকে দেখেছি নিজের স্কিল ভাল মনে করে ইন্টারভিউ বোর্ডে একটা ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব নিয়ে বসে থাকে। কিছু ব্যাপার পছন্দ না হলে তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলে। এইটা আসলে ঠিক না। এইখানে সফট স্কিল অনেক অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন সেখানে আপনার ভবিষ্যৎ কলিগ যারা থাকবে তারা যদি আপনার তাচ্ছিল্যতার কারণে হীনমন্যতায় ভুগে তাহলে কিন্তু তারা কর্মক্ষেত্রে তাদের সেরাটা দিতে পারবে না। এবং আপনার সাথে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ইন্টারভিউয়ার যখন এই ব্যাপারগুলো নোটিশ করবে তখন “টিম হেলথ” এর কথা চিন্তা করে আপনাকে রিক্রুট করবে না, যত মেধাবীই হন না কেন। কথায় আছে, “দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য”। যদিও আমাদের দেশে এই প্র্যাকটিসটা বেশীর ভাগ যায়গাতেই দেখা যায় না। দুঃখজনক হলেও সত্যি। তবে বাহিরের উন্নত দেশগুলোতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট।
আবার এমনও হতে পারে, আপনি হয়ত কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার এখনো জানেন না। কিন্তু আপনি যা জানেন তা শিখাতে আগ্রহী। এবং যা জানেন না তা অন্যান্য টিমমেটদের থেকে শিখতে আগ্রহী, তাহলে ইন্টারভিউ বোর্ডে অন্যান্য অনেকের থেকে আপনার মূল্য বেশী হতেও পারে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে প্রশংসা করা। কোন কলিগ যখন সামান্য কোন কাজ করল সেটাকে প্রশংসা করা এক ধরনের ভাল প্র্যাকটিস। আপনি যখন প্রশংসা করবেন তখন যে আপনার সাথে কাজ করছে সে অনেক উৎসাহিত ফীল করবে। এর মানে তার কাছ থেকে পরবর্তীতে অনেক বেশী আউটপুট পাওয়া যাবে। কিন্তু আপনি যদি তাকে তাচ্ছিল্য করা শুরু করেন তাহলে দেখবেন যে আসলে কাজে মন দিতে পারছে না। আলটিমেটলি, আপনার টিমের জন্য ভাল কিছু হচ্ছে না। এতক্ষণ যা নিয়ে কথা বললাম এইটা টিমওয়ার্ক বা কোলাবোরেশন এর কিছু অংশ, যা অনেকগুলো সফট স্কিলের মধ্যে একটা। এছাড়াও কমিউনিকেশন, টাইম ম্যানেজমেন্ট, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, ডিসিশন মেকিং ইত্যাদি আরো কিছু সফট স্কিলস আছে যেগুলোতে আমাদের নজর দেয়া উচিৎ। আপনি যখন একটা যায়গায় চাকরী করতে যান সেখানে টেকনিক্যাল স্কিল অবশ্যই অনেক বড় একটা বিষয়। কিন্তু এইটা ছাড়াও যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সফট স্কিল আছে সেগুলো আসলে বাদ দিলে চলবে না।
ইন্টারভিউ দিতে হবে অনেক
টেকনিক্যাল স্কিল কি কি লাগবে এই ব্যাপারে আমি খুব ভালো বলতে পারব না। কারণ বিভিন্ন পোস্টে বিভিন্ন রকমের স্কিল লাগে। যেটা আপনার অর্জন করতে হবে শিখে শিখে। আপনি যে ব্যাকগ্রাউন্ডে আছেন সেটা নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর বর্তমানে ইন্টারনেটে বই, ভিডিও টিউটরিয়াল, আর্টিকেল, ব্লগ ইত্যাদি সহ অনেক ভাল ভাল রিসোর্স পাওয়া যায়। এছাড়া আমাদের দেশের টেক কমিউনিটিও ইদানীং অনেক ভাল। সিনিয়রদের কাছে অনেক বিষয়ে সাহায্য পাওয়া যায়। সাথে ফেসবুকে বিষয়ভিত্তিক অনেক টেকনিক্যাল ডিসকাশন গ্রুপ আছে।
তবে আমি বলতে পারি, ইন্টারভিউ দিতে হবে অনেক। তাহলে অনেক কিছু জানা যাবে। প্রথমতই ধারণা হবে বাহিরের দেশের কোম্পানীগুলোর ইন্টারভিউ কেমন হয়। কোন কোম্পানি কেমন প্রশ্ন করে, কোথায় সুযোগ সুবিধা কেমন এইসবও জানা যাবে। ইন্টারভিউতে আপনার পূর্ববর্তী প্রজেক্ট অথবা চাকরীর অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন তাদের সাথে। তারাও বলবে তাদের কোম্পানিতে কিভাবে তারা কাজ করে। নতুন নতুন ধারণা পাবেন, কোন কিছু না জানলে সেটা রিসার্চ করে শিখে নিতে পারবেন। পরে সেটা নিজের প্রোজেক্টে কাজে লাগানো যাবে। এভাবেই নিজের প্রোফাইল, রেজুমে আরো ভারি হবে।
অনেকে ইন্টারভিউ দিতে চান না। এই ভেবে যে, জব requirement এ যা যা চেয়েছে আমি তো সব পারি না। শুধু শুধু ইন্টারভিউ দিয়ে কি লাভ? এইটা একটা ভুল ধারণা। যা যা চেয়েছে তার সবকিছুই যদি আপনি জানেন তাহলে ভাল সম্ভাবনা আছে আপনাকে ওই পজিশনের জন্য নাও নিতে পারে। কারণ সব যদি জেনেই থাকেন তাহলে আপনার জন্য নতুন করে শেখার তেমন কিছু নাই ওই পজিশনে। কয়েক সপ্তাহ পরেই আপনার জবটা বোরিং লাগা শুরু করতে পারে। এবং আপনি নতুন জব খোঁজা শুরু করবেন হয়ত। এই কথা চিন্তা করে অনেক সময় আপনার ফুল কোয়ালিফিকেশন থাকা সত্ত্বেও আপনাকে ওই নির্দিষ্ট পজিশনের জন্য নাও নিতে পারে। এমন ঘটনা আমাদের টিমের একটা পজিশনে ২-৩ বার ঘটেছে। ভাগ্যক্রমে আমিও ছিলাম ইন্টারভিউ বোর্ডে। অনেক কিছু শিখেছি কলিগদের কাছ থেকে।
তাই ছোট একটা টিপস হচ্ছে, জব অ্যাপ্লিকেশনে যা যা চেয়েছে তার সবকিছু জানা লাগবে না অথবা এক্সপার্ট হওয়া লাগবে না। ইদানীং অনেক জব পোস্টে আলাদা ভাবে উল্লেখ করা থাকে কি কি ব্যাপার জানতেই হবে। আর কি কি ব্যাপার জানা থাকলে ভাল। তো আপনি চাইলে সেগুলো উপেক্ষা করতে পারেন। ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করলে বলতে পারবেন ওইটা আমি এখনো জানি না, তবে শিখে নিতে পারব এবং আমি শিখতে খুব আগ্রহী।
সিভি আর রেজুমের পার্থক্য
জবে অ্যাপ্লাই করার আগে সিভি/রেজুমে থাকতে হবে। সিভি আর রেজুমের মধ্যে কি কি পার্থক্য তা অনলাইনে একটু ঘাটাঘাটি করে জেনে নিতে পারেন। তবে সারমর্ম হচ্ছে রেজুমে একটু ছোট, সাধারণত ১ পেজের হয়। ২ পেজও হতে পারে যদি অনেক বেশী কিছু উল্লেখ করার দরকার পরে। আর সিভিতে চাইলে অনেক কিছু বিস্তারিত লেখা যায়। তাই রেজুমে অপেক্ষা সিভি বড় হয়। তবে যত ছোট করা যায় তত বেশী ভাল। কারণ, রিক্রুটাররা সিভি/রেজুমে স্কিম করার জন্য সাধারণত ১০ সেকেন্ড এর বেশী দেয় না। এর মধ্যে যদি আপনার রেজুমে তাদের মনোযোগ নিতে পারে তাহলে তারা আরো কিছু সময় দেখে চিন্তা করবে আপনাকে প্রথম ইন্টারভিউতে ডাক দেয়া যায় কিনা।
সিভি/রেজুমে তে কি কি লাগবে?
কয়েকটা ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকার কারণে আমি অনেক অনেক সিভি/রেজুমে দেখেছি। অনেক সিভিতেই দেখি ক্যান্ডিডেট কি কি করেছেন তার বর্ণনা দিয়ে থাকে। কিছু উদাহরণ এমনঃ
- আমি একটা কমপ্লিট ই-কমার্স সিস্টেম বানিয়েছি
- PHP/Java/Go ইত্যাদি দিয়ে অমুক একটা অ্যাপ্লিকেশন বানিয়েছি
এইভাবে লিখলে আপনার কাজ সম্পর্কে খুব ভাল কোন অর্থ বহন করে না। কারণ এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সাধারণত কোন কোম্পানিতে একা কেউ বানায় না। একটা টীমে কয়েকজন একসাথে কাজ করে। কি কি করেছেন সেইটা বলার চেয়ে আপনি কোন মডিউলে কাজ করেছেন এবং আপনার কাজের জন্য কি রকম বিজনেস ইমপ্যাক্ট পড়েছে সেটা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আমি যদি আগের উদাহরণটাই একটু অন্য ভাবে লিখি।
- আমি XYZ ই-কমার্স সিস্টেমের পেমেন্ট মডিউলের আর্কিটেকচারটা নতুন ভাবে ডিজাইন করে সার্ভারের লোড কমিয়েছি, যার কারণে সার্ভার খরচ আগের চেয়ে ৩০% কমেছে
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে ইদানীং অনেক কোম্পানি সিভি/রেজুমে স্ক্রিনিং করার জন্য অটোমেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে। যদি ফরম্যাট ঠিকঠাক না থাকে, অথবা কাঙ্ক্ষিত কোন কিওয়ার্ড না পাওয়া যায়, তাহলে প্রি-স্ক্রিনিং এই আপনার প্রোফাইল বাদ পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পোস্টের শেষে একটা লিঙ্ক দেয়া আছে যেটি ব্যবহার করে ফ্রীতে রেজুমে স্ক্যান করে নিতে পারবেন। তাহলে কোথায় কি কি ফিক্স করা দরকার সেই ধারণা পাওয়া যাবে, এবং পরবর্তীতে আরো ভালভাবে আপনার রেজুমে সাজাতে পারবেন। মনে রাখবেন, কি কি করেছেন সেটা না উল্লেখ করে আপনার কাজের কারণে কি কি ইমপ্যাক্ট পড়েছে সেটা উল্লেখ করা অনেক ভাল। সোজা কথায় আপনার অ্যাচিভমেন্ট গুলো কি কি।
আর রেজুমে সময় নিয়ে বানাবেন। ২-১ দিনে হয়ত ভাল করে বানাতে পারবেন না। প্রয়োজনে ১-২ সপ্তাহ সময় নিয়ে ভাল করে বানান। কারণ রেজুমে আপনার সম্পদ। পরবর্তীতে যখন আরো দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এইটা আস্তে আস্তে রেজুমেতে আপডেট করে নিবেন। অন্য কারো রেজুমে দেখে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। কিন্তু কখনোই কপি করবেন না। নিজে থেকে যখন কিছু লিখবেন তখন আপনার আগের কাজ করা সব স্টোরিগুলো মনে পরবে। এইগুলোই তখন গল্প আকারে ইন্টারভিউতে বলতে পারবেন। আর ইন্টারভিউয়াররা আসলে এটাই দেখতে চায়। আপনি যা লিখেছেন তার বিস্তারিত তাদেরকে বলতে পারছেন কিনা। রেজুমে থেকে কোন প্রশ্ন করলে আপনি তাদের সাথে আপনার পূর্ববর্তী কাজ নিয়ে যখন একটা হাই ব্যান্ডউইধ আলাপ করতে পারবেন তখন আপনাকে জেনুইন ক্যান্ডিডেট হিসেবে মূল্যায়ন করবে।
কভার লেটার কেমন হওয়া উচিৎ
ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে বর্তমানে কভার লেটার সব সময় চাওয়া হয় না। মডার্ন জব সাইটগুলোতে এমন ভাবে প্রশ্নমালা দেয়া থাকে যেখানে সিভি/রেজুমে আপলোড করার পর প্রশ্নের উত্তরগুলো দিলে প্রগ্রেসিভ আকারে অ্যাপ্লিকেশন হয়ে যায়। তারপরেও কোথাও কোথাও কভার লেটার অপশনাল রাখা হয়। কভার লেটার দেয়ার অপশন থাকা মানে আপনার নিজের সম্পর্কে আরো কিছু জানানোর সুযোগ থাকে। যেগুলো আপনি রেজুমেতে উল্লেখ করতে পারেন নি। কভার লেটার লিখার আগে যেই কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করছেন তার সম্পর্কে একটু রিসার্চ করতে পারেন। তাদের বিজনেস মডেল কেমন। এই বিজনেজ মডেলে আপনার আগের কোন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে কিনা। অথবা দেখতে পারেন তাদের বর্তমান টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ কি কি। বর্তমান অবজেক্টিভের সাথে আপনার স্কিল ম্যাচ করে কিনা। তখন উল্লেখ করতে পারেন আপনি এই রকম অভিজ্ঞতা থাকার কারণে কিভাবে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে পারেন। অথবা অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনার টেকনিক্যাল গুন ছাড়া অন্য কি কি গুন আছে যেটার কারণে আপনি সেই কোম্পানির উপকারে আসবেন।
হয়ত জব ডেসক্রিপশনে থাকতে পারেঃ
- আমরা লিগ্যাসি সফটওয়্যারের মনোলিথ আর্কিটেকচার থেকে মাইক্রো-সার্ভিসে কনভার্ট করতে চাচ্ছি
আপনার এইরকম অভিজ্ঞতা থাকলে সেটা উল্লেখ করে বলতে পারেনঃ
- আমরা ৩ জনের টীমে কাজ করে এইটা খুব ভাল ভাবে মাইক্রো সার্ভিসে শিপ করেছি। আগে আমাদের RPS ছিল ২০০, এখন আমরা ১০০০ পর্যন্ত নিতে পারি
মনে রাখতে হবে, কভার লেটার কখনোই কপি করবেন না অথবা টেম্পলেট বানাবেন না। একটু সময় নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কভার লেটার লিখবেন। কোম্পানি বা ওই পজিশনের ব্যাপারে রিসার্চ করে যে পয়েন্টগুলোতে কথা বলা দরকার, ঠিক সেই পয়েন্টেই যখন আপনি কথা বলবেন তখন হায়ারিং ম্যানেজারের কাছে আপনার প্রায়োরিটি অনেক বেড়ে যাবে। টেম্পলেট পাঠালে সাথে সাথে বাদ দিয়ে দেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
বেশী বেশী অ্যাপ্লাই করতে হবে
ভাল জব পাওয়ার একটা রহস্য হচ্ছে বেশী বেশী জবে অ্যাপ্লাই করতে হবে। যত বেশী অ্যাপ্লাই করবেন তত বেশী ইন্টারভিউ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অ্যাপ্লাই করে ইন্টারভিউ না পেলে হতাশ হওয়া যাবে না। হয়ত আপনি ১০টা জবে অ্যাপ্লাই করলে ১টা ইন্টারভিউতে ডাক পেতে পারেন। যদি অনেক জবে অ্যাপ্লাই করার পরেও ইন্টারভিউতে ডাক না পান তাহলে বুঝতে হবে রেজুমে বা সিভিতে কিছু মিসিং আছে। প্রয়োজনে আবার এই ব্লগ পোস্টটা ভিজিট করতে পারেন। যেসব টিপস এবং টুলস নিয়ে বলেছি সেগুলো আবার রিভিজিট করতে পারেন। এই বিষয়ে আমি ছাড়াও অনেকে কথা বলছে ইন্টারনেটে। তাদের ব্লগ, ভিডিও, অন্যান্য কন্টেন্টগুলোও দেখুন। তারপর নিজের মত একটা স্টাইল দাঁড় করান।
জব আপ্লিকেশন থেকে শুরু করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইন্টারভিউ এবং কখনো কখনো চতুর্থ ইন্টারভিউ দেয়া লাগে। এর পরে অফার পাওয়া, সেটায় রাজি হওয়া, দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া, শেষে জয়েনিং করা পর্যন্ত এই যাত্রা পথটা মোটামুটি বড় ও সময় সাপেক্ষ। তাই একটু ধৈর্য ধরে অল্প অল্প করে কাজ করে যেতে হবে। আমি, আমার বন্ধুরা ও আগের অফিসের কলিগ যারা এই রকম জব নিয়ে বিদেশে এসেছেন তারা সবাই এইরকম ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েই এসেছেন। চাইলে আপনিও পারবেন। :)
কোম্পানির খুঁটিনাটি বের করুন
জবে অ্যাপ্লাই করার জন্য অনলাইনে অনেক সাইট আছে। যেমনঃ LinkedIn, Glassdoor, StackOverflow ইত্যাদি। আপনি যদি কোন কোম্পানিকে পছন্দ করে থাকেন বা অনেকদিন যাবৎ ফলো করে থাকেন তাহলে তাদের কোম্পানি পেজ থেকে সরাসরি অ্যাপ্লাই করতে পারেন। তবে জব লিস্টিং সাইট থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইট পাওয়া যায়।
যেমনঃ লিঙ্কডইনে যে কোন কোম্পানির বর্তমান এমপ্লয়ী যারা আছে তাদের প্রোফাইল দেখতে পারবেন। তারা কি কি নিয়ে কাজ করে ধারণা পাবেন। অথবা তারা আগে কি কি স্কিল নিয়ে এই রকম জবে এসেছে সেটার ব্যাপারে মোটামুটি একটা ধারণা করতে পারবেন। এবং বুঝতে পারবেন তাদের মত আপনারও কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে জানা লাগবে কিনা।
আবার গ্লাসডোরে অনেক কোম্পানির বর্তমান এমপ্লয়ীদের বিভিন্ন পজিশন ভিত্তিক বেতন কেমন সেটাও উল্লেখ করা থাকে। আপনার জন্য তখন সিদ্ধান্ত নেয়া সুবিধা হবে ওই কোম্পানিতে জবের জন্য যাবেন কিনা।
অথবা কোম্পানির বর্তমান ও আগের ফিনান্সিয়াল অবস্থা জানার জন্য crunchbase ব্যবহার করতে পারেন। এই টুল ব্যবহার করে জানতে পারবেন কোম্পানির সাইজ কেমন। সর্বমোট কত মানুষ সেখানে কাজ করে। গত কয়েক বছরে কি রকমের ফান্ড পেয়েছে, স্টক মার্কেটে তাদের লিস্টিং আছে কিনা ইত্যাদি।
জীবন vs স্ট্যাটাস
বর্তমানে গ্লোবালাইজেশনের কারণে শুধুমাত্র গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট ইত্যাদি কোম্পানি বাদেও দুনিয়াতে অনেক ভাল কোম্পানি আছে যাদের ওয়ার্কপ্লেস কাজের জন্য খুবই উপযোগী। হয়ত আমরা সব কোম্পানির নাম জানি না। অমুক কোম্পানিতে চাকরী পাওয়া মানে একটা স্ট্যাটাস, অন্য কোম্পানিতে গেলে আমার স্ট্যাটাস থাকবে না, এই রকম চিন্তা করা এখনকার সময়ে আসলে বোকামি। আগে যেটা বলেছিলাম.. জীবনকে উপভোগ করতে হবে, স্ট্যাটাসকে নয়। এমন হতেই পারে স্ট্যাটাস ও বড় নাম দেখে এমন একটা কোম্পানিতে জয়েন করলেন, যেখানে অফিস পলিটিক্স থেকে শুরু করে মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদির কারণে জীবনটা আসলে সুন্দর না। আপনি যখন সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুই স্ট্যাটাস উপভোগ করা শুরু করবেন তখন আস্তে আস্তে আপনার আশে-পাশে লোকজন পাবেন না। একটা সময় পরে জীবনটা হয়ত আর উপভোগ করা যাবে না।
শেষ কথা
রিসার্চ করতে থাকুন। অনেক বেশী ঘাটাঘাটি করুন। তাহলে অজানা অনেক কিছু জানা যাবে। আশা করি এই পর্বে শেয়ার করা টিপসগুলো কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার নিজের স্টাইলটা খুঁজে পাবেন এবং খুব ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবেন। যারা জব নিয়ে দেশের বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের সবাইকে প্রথম ইন্টারভিউ পাওয়ার জন্য শুভকামনা। প্রথম ইন্টারভিউ পাওয়ার পরে কমন সফট স্কিল প্রশ্ন কি কি থাকে এবং উত্তরগুলো কেমন হওয়া উচিৎ সেটা নিয়ে পরের পর্বে আলাপ করব।
পরের পর্বের লিঙ্কঃ aniskhan001.me/life/জব-নিয়ে-কিভাবে-বিদেশে-যাওয়া-যায়-পর্ব-২
আগের পর্বঃ aniskhan001.me/life/জব-নিয়ে-কিভাবে-বিদেশে-যাওয়া-যায়-পর্ব-০
ব্লগটা ভিডিও আকারে দেখতে চাইলেঃ
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কঃ
- ফ্রীতে নিজের রেজুমে স্ক্যান করার টুলঃ TopResume.com
- প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক সাইটঃ LinkedIn.com
- জব সার্চ ইঞ্জিন ও রিভিউ সাইটঃ Glassdoor.com
- জব সার্চ ইঞ্জিনঃ Indeed.com
- কোম্পানি ডাটাবেজঃ Crunchbase.com