অনেকগুলো সফট স্কিলের মধ্যে আজ ৩টা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে কথা বলব। প্রশ্ন ৩টা হচ্ছেঃ

  • Tell me about yourself
  • Why did you apply for this company?
  • Do you have any questions for us?

trivago তে ইন্টারভিউ দেয়ার সময় এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি কিভাবে দিয়েছিলাম সেটাও শেয়ার করবো।

Tell me about yourself - আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন

এই প্রশ্নটা খুব সহজ প্রশ্ন হলেও উত্তরটা মাঝে মাঝে খুব কঠিন হয়ে যায়। নিজের সম্পর্কে কিছু জানতে চাওয়া হলে অনেকেই আগে কি কি করছেন এবং বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে কি কি নিয়ে কাজ করছেন সেটা বলা শুরু করেন। কিন্তু আমার মনে হয়ে এটা একটা ভুল এপ্রোচ। কারণ আপনি যা যা করেছেন বা এখন যা যা করেছেন তা আপনার সিভি/রেজুমে তে অলরেডি দেয়া আছে। তাই ২-৫ মিনিট সময় ব্যয় করে এই তথ্যগুলো পুনরায় না দেয়াই ভাল। আমাকে এই প্রশ্ন করলে আমার উত্তর হবেঃ

I’m a very calm person. I can stay calm during the toughest situation of life. It helps me to focus on the problems that needs solution quickly.

এই বাক্যটার মাধ্যমে আমি আমার পার্সোনাল একটা অ্যাট্রিবিউট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যে আমি একজন শান্ত স্বভাবের মানুষ এবং শান্ত থাকার কারণে এটা কিভাবে আমাকে প্রফেশনাল লাইফে প্রবলেম সল্ভ করতে সাহায্য করে। এই তথ্যটা সাধারণত আপনি আপনার সিভি বা রেজুমেতে তুলে ধরতে পারবেন না। কিন্তু ইন্টারভিউতে এই তথ্যটা দিলে ইন্টারভিউয়ার আপনার সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পারবে। পার্সোনাল অ্যাট্রিবিউট শেয়ার করার পরে আমি একটা গল্পও শেয়ার করি। কেন আমি শান্ত থাকার কারণে দ্রুত প্রবলেম সল্ভ করতে পারি। গল্পটা এমনঃ

একদিন অফিসে হঠাৎ করে পিক আওয়ারে ম্যাপ সিস্টেম ডাউন হয়ে যায়। সিস্টেম ডাউন থাকার কারণে আমরা অনেকগুলো অর্ডার মিস করি। যেহেতু পিক আওয়ারে অর্ডার আসছে না, অনেকেই মোটামুটি প্যানিক শুরু করে দেয়। কিন্তু যেহেতু আমি ঠাণ্ডা মাথায় ছিলাম, আমি দ্রুত চিন্তা করতে পেরেছি সমস্যাটা কোথায় হতে পারে। পরে একটু ডিবাগ করে দেখলাম ড্যাটাবেজে একটা টেবিলের কলামে ভুল টাইপের ড্যাটা পুশ করা হয়েছে, যার কারণে অ্যাপ্লিকেশন কাজ করছে না। তাই আমি তাড়াতাড়ি ড্যাটা টাইপটা ফিক্স করলাম, এবং তার কারণে সিস্টেমটা আপ এন্ড রানিং হয়ে যায়, আর আমরা অর্ডার পেতে শুরু করি। সিস্টেম আপ হওয়ার পরে সময় নিয়ে একটা ভ্যালিডেশন লেয়ার অ্যাড করে দিয়েছি যাতে এই রকম ভুল টাইপের ড্যাটা আর পুশ না করা যেতে পারে।

মানুষের জন্য সব সময় গল্প মনে রাখা খুব সহজ। আপনি যখন কোন নির্দিষ্ট তথ্য বা ড্যাটা তাকে দিবেন, সেটা হয়তবা একবার শুনে কেউ মনে রাখতে পারবে না। কিন্তু যখন কোনও অভিজ্ঞতা গল্প আকারে শেয়ার করবেন সেটা ইন্টারভিউয়ার কিছুদিন হলেও মনে রাখবে। কারণ আপনি একটা ইন্টারেস্টিং এবং রেলেভেন্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা অন্যান্য সকল ক্যান্ডিডেট থেকে আপনাকে আলাদা করে ফেলবে।

এইভাবে উত্তর দেয়ার টেকনিকটাকে অনেকে STAR মেথড বলে।
STAR মানে হচ্ছেঃ Situation ➤ Task ➤ Action ➤ Result

Situation

আমার যখন গল্পটা শেয়ার করি তখন একটা Situation তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
➤ পিক আওয়ারে ম্যাপ সিস্টেম ডাউন হয়ে যায়। এবং সেই কারণে আমরা অনেকগুলো অর্ডার মিস করি।

Task

Situation টার কারণে কিছু Task চলে এসেছে।
➤ সিস্টেম ফিক্স করতে হবে যাতে পুনরায় আমরা অর্ডার নিতে পারি।

Action

Task এর কারণে আমার কিছু Action নেয়া লেগেছে।
➤ ড্যাটা টাইপটা ম্যানুয়ালি ফিক্স করলাম যাতে সিস্টেমে আবার অর্ডার আসা শুরু করে। পরে ভ্যালিডেশন লেয়ার অ্যাড করে দিয়েছি ফিউচার প্রুফিং এর জন্য।

Result

সব শেষ করে একটা Result পেয়েছি।
➤ এক্ষেত্রে আমার Result ছিল কিছু learning! এই রকম সিস্টেম ড্যাটা পুশ করার আগে ভ্যালিডেশন লেয়ার অবশ্যই অ্যাড করতে হবে। সেই সাথে, কোম্পানির বিজনেজ এর কথা চিন্তা করে তৎক্ষণাৎ কিভাবে দ্রুত সিস্টেমটা আপ এন্ড রানিং করা যায় সেটার গুরুত্ব আগে দেয়া। অবশ্যই পরবর্তীতে যাতে অনুরূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেভাবে সল্যুশন তৈরি করতে হবে।

এভাবে বর্ণনা দিলে আপনার সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ারের ভাল একটা ধারণা হবে। কারণ আপনি ভুল স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেন না, এবং ভুল থেকে শিখতে আগ্রহী। এভাবে ভুল করেই সবার শেখা ও অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। তাই আমার পরামর্শ হচ্ছে, নিজের যে কোন একটা পার্সোনাল অ্যাট্রিবিউট তুলে ধরে সেই প্রেক্ষিতে কোন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। এভাবে উত্তর দিলে আপনার সাথে অন্য ক্যান্ডিডেটদের তৎক্ষণাৎ একটা পার্থক্য তৈরি হয়ে যাবে।

Why did you apply for this company - কেন এই কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করেছেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমার সবচেয়ে বড় টিপসটা হবে just be honest.
অনেকে টিপস দেয় আপনি যেই কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করছেন, তাদের ভাল দিকগুলো কি কি সেগুলো তুলে ধরতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি যখন অ্যাপ্লাই করছেন, একজন আউটসাইডার হিসেবে কিন্তু সব তথ্য আপনি কোম্পানি থেকে পাচ্ছেন না। তাই আপনার পক্ষে ভাল দিক গুলো তুলে ধরা একটু কঠিন হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটা সিক্রেট হচ্ছে, যারা আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছে তারা কিন্তু কোম্পানির মালিক না। সিনিয়র পর্যায়ের কেউ হলে হয়ত বড়জোড় তাদের কিছু স্টক বা শেয়ার থাকতে পারে। দিনশেষে তারাও কিন্তু আপনার মতই কোম্পানির অধীনে কাজ করছে। তাই কোম্পানির গুনগান খুব বেশী একটা না করলেও চলবে।

আপনি আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেনঃ

আপনি কি ঠিক এই কোম্পানিতে কাজ করার জন্য দেশের বাহিরে যেতে চান?
নাকি দেশের বাহিরে যেতে চান বলে একটা কোম্পানিতে চাকরী খুঁজছেন?
আগে কি আপনার চাকরী নাকি আগে আপনার লাইফ?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেলে আপনার দক্ষতার সাথে যেই পোস্টে অ্যাপ্লাই করেছেন সেটার সামঞ্জস্য আছে কিনা সেটা তুলে ধরতে পারেন। এবং এই কোম্পানিতে কাজ করার মাধ্যমে আপনি কি কি শিখতে পারবেন, সেটা আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে খাপ খায় কিনা সেটাও মেনশন করতে পারেন। আর বর্তমান কোম্পানিতে আপনি কি কি মিস করছেন সেটাও তুলে ধরতে পারেন, যেটা হয়ত অন্য কোথাও গেলে পাবেন। সেটা হতে পারে বেতন, ওয়ার্ক কালচার, নতুন কিছু শেখার সুযোগ ইত্যাদি।

অবশ্যই আপনার বর্তমান কোম্পানি সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা যাবে না। কারণ আপনি যদি বাজে কোন মন্তব্য করেন তাহলে ব্যাপারটা নেগেটিভ ভাবে নিতে পারে। আপনি এখন যেই কোম্পানিতে আছেন সেখানে অনেক কিছুই আপনার পছন্দ না হতে পারে। যেই ঘাটতিগুলো আপনার বর্তমান কোম্পানিতে আছে সেটা হওয়ার নানা কারণও থাকতে পারে।

যেমনঃ আপনার বর্তমান পজিশনে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেতন পাচ্ছেন না। কিন্তু কোম্পানির স্যালারি স্ট্রাকচার অনুযায়ী আপনার বেতন মানান সই। এইটা পুরোপুরি কোম্পানির দোষ নাও হতে পারে। কারণ তাদের স্ট্রাকচার ছেড়ে আপনাকে আলাদা বেশী বেতন দিবে এটা সচরাচর হয় না। আপনি মেনশন করতে পারেন আপনার জীবন যাপনে যেই পরিমাণে বেতন প্রয়োজন সেটা পাচ্ছেন না, তাই চাকরী পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন।

আবার এমনও হতে পারেঃ আপনি যেভাবে কাজ করতে চাচ্ছেন সেভাবে হচ্ছে না। হতে পারে আপনি বেস্ট প্র্যাকটিস ফলো করে গুছিয়ে কাজ করে কাজ করতে চান। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ কোম্পানি স্টার্টআপ হওয়ায় কারণে বিজনেস রিক্যুয়ারমেন্ট খুব তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয়। এটাও সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির দোষ না, কারণ মার্কেটে টিকে থাকতে হলে বিজনেস রিক্যুয়ারমেন্ট তাড়াতাড়ি শিপ করা লাগে। তখন বেস্ট প্র্যাকটিস ফলো করা অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনি মেনশন করতে পারেন একটা স্ট্যাবল কোম্পানিতে চাকরী খুঁজছেন যেখানে বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো ফলো করে আপনার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।

এইভাবে মেনশন করলে কিন্তু কাউকে দোষারোপ করা হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতির কারণে আপনার যা যা দরকার সেটা বর্তমান কর্মক্ষেত্রে পাচ্ছেন না। কিন্তু ব্লেমিং করলে সেটা প্রথমেই নেগেটিভ হিসেবে নিতে পারে, এবং খুব ভাল সম্ভাবনা আছে আপনাকে প্রথম স্টেজেই বাদ দিয়ে দিবে।

অনেকে বলে, honesty is the best policy! কিন্তু আমার মনে হয় honesty is the ONLY POLICY. Anything other than honesty is just corruption at some point.

ইন্টারভিউতে বিভিন্ন প্রশ্নের গৎবাঁধা উত্তর না দিয়ে একটু রিল্যাক্সভাবে কথা বলতে পারলে ভাল। কারণ আমি, আপনি, ইন্টারভিউয়ার, আমরা সবাই মানুষ। জেনুইনলি আপনি মানুষটা কেমন সেটা যদি ইন্টারভিউতে কিছুটা হলেও ফুটে উঠে তাহলে ইন্টারভিউয়ারদের পক্ষে আপনাকে বাছাই করা খুব সহজ হয়ে যাবে। আপনি যখন ভালভাবে জানেন যে কেন এই কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করছেন, তখন আপনার মাথার ভেতরে কিন্তু পুরো লক্ষ্যটা পরিষ্কার। মাঝে অন্য কোন প্রশ্নে ঘাবড়ে গেলেও ভিতর থেকে যেই উত্তরটা দিতে চাচ্ছেন সেটা খুব সহজেই কোন চিন্তা ছাড়াই দিতে পারবেন। কিন্তু যদি কোন বানানো বা মিথ্যা উত্তর দিতে চান, সেটা যতই প্র্যাকটিস করেন না কেন, ভালভাবে ডেলিভার করতে পারবেন না।

My interview journey at trivago

trivago তে যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম তখন এই প্রশ্নের উত্তরটা আমি কিভাবে দিয়েছিলাম সেটা শেয়ার করতে পারি।

ইন্টারভিউয়ার যখন জিজ্ঞাসা করেছিল, “Why did you apply for this company?”
আমি তখন এক কথায় উত্তর দিয়েছিলাম, “আমার বাবা-মা চায় আমি বিদেশ চলে যাই।” আমার উত্তর শুনে ইন্টারভিউয়ার একটু হাসল আর জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি এমন করেছ যে তোমার বাবা-মা চায় তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাও”। আমিও তখন হেসে উত্তর দিলাম, “ব্যাপারটা আসলে এমন না। আমার বাবার যেহেতু এখন কোন কাজ নেই এবং পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে আমাকে পরিবারে একটা কন্ট্রিবিউশন করা লাগে, তাই চিন্তা করে দেখলাম জব নিয়ে দেশের বাহিরে গেলে সেটা আমার জন্য ভাল হবে।” আমি তখন পাঠাওতে কাজ করতাম, আমার বেতন মাশা’আল্লাহ্‌ খুব ভালই ছিল। বাংলাদেশের মার্কেট স্ট্যান্ডার্ডে one of the best, if not the best। শুধু নিজের চিন্তা করলে খুব ভালভাবেই চলে যেত। কিন্তু যেহেতু আমার পরিবারে মানুষ বেশী তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেখলাম যা পাচ্ছি তার চেয়েও আরো বেশী লাগবে। এই জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা চিন্তা করলাম।

এটা শুনার পর জিজ্ঞাসা করল, “Why germany? Why not any other country?”
আমি উত্তর দিলাম, “টাকা-পয়সা অবশ্যই দরকার। তবে আমার কাছে লাইফও গুরুত্বপূর্ণ। আমি একটু রিসার্চ করে দেখলাম ইউরোপে work-life balance অনেক ভাল। আর বর্তমানে জার্মানিতে IT industry অনেক ভাল এবং জার্মানির অর্থনীতি খুব শক্তিশালী, তাই জার্মানিই প্রথম পছন্দ। আর যেহেতু ঘুরাঘুরি করতে ভাল লাগে তাই জার্মানি আসতে পারলে এখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য যে কোনও দেশে সহজেই ঘুরা যাবে।” এইটা শুনে জিজ্ঞাসা করল, “এখন পর্যন্ত তুমি কিরকম ঘুরাঘুরি করেছ?” আমি তখন বলে দিলাম আমাদের দেশের রাজশাহী, বিরিশিরি, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সাজেক সহ অন্যান্য অনেক যায়গায় ঘুরেছি। সাথে কিছু যায়গার নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছি। যদিও তখন খুশিমনে বলে দিয়েছি সব; কিন্তু পরে চিন্তা করে বুঝলাম আসলে এই প্রশ্নটা করেছিল আমার জেনুইনননেস বুঝার জন্য। আমি যে ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করি, সেটা আসলেই করি কিনা সেটা আমার উত্তর থেকে তারা বুঝে নিয়েছে।

জেনুইনন্নেস বুঝার জন্য আরেকটা মজার প্রশ্ন করেছিল। হুট করে একজন জিজ্ঞাসা করে বসল, “Oh I see you are a pizza fan, what is your favorite pizza?” আমি তখন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “errm, Can I please ask from where did you know that I am a pizza fan?” সে উত্তর দিল, “oh it was written in your github page” এটা শুনে আমার একটু খুশি লাগলো যে সে আমার ব্যাপারে গুগল করে দেখেছে। কারণ আমি আমার ওয়েবসাইটের লিঙ্কটা সিভিতে দেইনি। তো আমি লালবাগের ভুতের বাড়ির 4 season পিজ্জা, পিজ্জা গাইয়ের vegetrian nightmare পিজ্জা এই ২টার বর্ণনা দিয়ে দিলাম। সাথে বোনাস হিসেবে বনানীর পিজ্জা বক্স নামে একটা দোকান ছিল সেটাও উল্লেখ করলাম। কারণ আমি, আমার ফ্রেন্ড নিক্সন ও রাতুল মাঝে মাঝেই চলে যেতাম সেখানে অফিস শেষে শুধুমাত্র ৮০০ টাকায় ২টা বড় বড় পিজ্জা পাওয়া যেত বলে। 😉

এরপরে উল্লেখ করলাম, আমি যেই টেকনোলজি নিয়ে বর্তমানে কাজ করি trivago এর এই জব পোস্টের রিক্যুয়ারমেন্টের সাথে বেশিরভাগই মিলে যায়। তবে কিছু টেকনলজিতে এখনো কাজ করা হয় নাই, যেগুলো অন্যান্য কাজের কারণে বর্তমান যায়গায় শেখা হচ্ছে না।

আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ও লাইফ গোলস গুলো শেয়ার কারণে তাদের মধ্যে কোন সহানুভূতি তৈরি হবে না। কারণ দিন শেষে আপনার দক্ষতাটাকেই তারা আগে দেখবে। তবে আপনার ভিশন কি, মিশন কি, এবং ভবিষ্যতে যা যা চাচ্ছেন সেই ব্যাপারে আপনি নিজে পরিষ্কার কিনা সেটা জানানোও অনেকটা জরুরী। কারণ আপনি আপনার লক্ষ্যে পরিষ্কার থাকলেই কর্মক্ষেত্রে আপনার সেরাটা দিতে পারবেন।

Do you have any questions for us? আপনার কি কোনও প্রশ্ন আছে?

প্রায় মোটামুটি প্রত্যেক ইন্টারভিউ শেষেই এই প্রশ্নটা করা হয়। এবং এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আপনার যদি ভাল কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে এই পজিশনে জয়েন করার জন্য আপনার যে প্রবল ইচ্ছা আছে সেটা প্রকাশ পায়। ইদানীং অনেক ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকি। যখন ইন্টারভিউ শেষে এই প্রশ্নটা করা হয় বেশীরভাগ সময়েই তাদের হয় কোন প্রশ্ন থাকে না, অথবা এমন সব প্রশ্ন করে যার উত্তর জব পোস্টেই মেনশন করা আছে। এই যেমন, আপনাদের টিমের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কি, আপনারা কোন ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে কাজ করেন, কি কি টেক ইউজ করেন ইত্যাদি। এই রকম প্রশ্নের মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে আপনি হয়তবা জব পোস্টটা ভাল করে পড়েননি অথবা পর্যাপ্ত মনোযোগ দেননি।

একটা ভাল প্রশ্ন হতে পারে যিনি ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তাকে জিজ্ঞাসা করা, “এই কোম্পানিতে একজন চাকরিজীবী হিসেবে আপনার সবচয়ে ভাল অভিজ্ঞতা কি?” যিনি উত্তর দিবেন তার উত্তর শুনে বুঝতে পারবেন তার অভিজ্ঞতা কি আসলেই ভাল নাকি উনি বলতে গেয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এই প্রশ্নের উত্তর থেকে আপনি মোটামুটি সেই কোম্পানি কালচার সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়ে যাবেন। মনে রাখতে হবে ইন্টারভিউ আসলে দুইদিকেই হয়। তারা যেমন কোম্পানির হয়ে আপনার ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, আপনিও ক্যান্ডিডেট হিসেবে কোম্পানির ইন্টারভিউ নিচ্ছেন। এছাড়া টেকনোলজি, ওয়ার্ক কালচার, অথবা প্রসেস সম্পর্কে জটিল কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন যেটা জব পোস্টে উল্লেখ করা নেই।

কিছু ভাল প্রশ্ন হতে পারে কোম্পানি সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করে বিজনেস রিলেটেড প্রশ্ন করা। আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং, সেলস, মার্কেটিং যেই ফিল্ডেই কাজ করেন না কেন, যদি কোম্পানির বিজনেজ ভাল গতিতে না আগায় তাহলে সেখানে কাজ করা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভাল নাও হতে পারে। আমি যখন trivago তে অ্যাপ্লাই করি তখন একটা খবরে দেখেছিলাম বিশ্বব্যাপী কভিড হওয়ার পরে ৯৫% রেভিনিউ লস হয়েছে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম “৯৫% রেভিনিউ লস হওয়ার পরেও trivago অনেক মানুষ হায়ার করছে, এইটার কারণ কি? এবং আগামী কয়েক বছরেও ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রি থেকে আগের মত ব্যবসা করা যাবে না। এইটার জন্য trivago কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে?” প্রশ্নের উত্তর হিসেবে ইন্টারভিউয়ার তখন তাদের কোম্পানি নিয়ে ভবিষ্যৎ প্ল্যান কি, এবং বিজনেস কোথায় কোথায় শিফট/রেনোভেট করবে সেই প্ল্যান শেয়ার করল। যেটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। এইরকমের প্রশ্ন করার মানে হচ্ছে আপনার জীবনের পরবর্তী পদক্ষেপটা আপনি খুব গুরুত্ব নিয়ে দেখছেন। আপনার এই ফোকাসের কারণে অন্যান্য অনেক ক্যান্ডিডেট থেকে আপনাকে খুব সহজেই আলাদা করা যাবে।

শেষ কথা

অনেকগুলো সফট স্কিল প্রশ্ন আছে। সবগুলোর মধ্যে এই ৩টা আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। অন্যান্য সফট স্কিল সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করে জেনে নিতে পারেন। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। সময় পেলে পরবর্তীতে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

পর্ব ০ঃ aniskhan001.me/life/জব-নিয়ে-কিভাবে-বিদেশে-যাওয়া-যায়-পর্ব-০
পর্ব ১ঃ aniskhan001.me/life/জব-নিয়ে-কিভাবে-বিদেশে-যাওয়া-যায়-পর্ব-১


ব্লগটা ভিডিও আকারে দেখতে চাইলেঃ