“প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট তো বাচ্চারা করে।”

বলেছিলেন এক বড় ভাই

“এইসব কন্টেস্ট-ফন্টেস্ট করলে তোমারে কে চাকরী দিবে?”

বলেছিলেন আরেক বড় ভাই

“প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট করলে আসলে আমাদের মাথা একটা নির্দিষ্ট চিন্তার বলকে আটকে যায়”

বলেছিল এক সহপাঠী

আসলে তাদের কেউই উপলব্ধি করতে পারেনি কন্টেস্ট প্রোগ্রামিং কি জিনিস! কেউ হয়তো ইতিমধ্যেই কিছুটা বুঝেছে, কেউ হয়তো পারবে কোনও একদিন। 🙂

২০১২ তে যখন প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট শুরু করি তখন এইসব শুনেছিলাম। তারপরেও থামিনি। কারণ একটাই, ভাল লাগতো। ওইসব চাকরী-বাকরি বা কোন ফায়দার কথা তখনও চিন্তায় আসেনি। হয়তো খুব ভাল কিছু করে দেখাতে পারিনি। বেশী সময় দিতে পারিনি, কারণ নানা কাজ করতে হয়েছে। তবে বলতে পারবো চেষ্টা করেছি এবং অনেক কিছু শিখেছি। এবং টের পাই এর গুরুত্ব। সফটওয়্যারের কোন বাগ খুঁজে বের করা, কি রকম টেস্ট কেসে প্রোগ্রাম আটকে যেতে পারে, একটা নির্দিষ্ট টাস্ক সম্পন্ন করতে হাজার হাজার সিপিইউ অপারেশন না করে কিভাবে কয়েকটা অপারেশনে করা যায়, ইত্যাদি অনেকেই মাথায় রাখে না। যেটা মাথায় রাখে একজন কন্টেস্ট প্রোগ্রামার। আর এই জন্যই তাদের চাহিদা অনেক অনেক বেশী। যেখানে অনেকের স্বপ্ন থাকে Google, Microsoft বা Facebook এ যোগ দেয়া, সেখানে এই কোম্পানিগুলোই এইসব প্রোগ্রামারদের খুঁজে খুঁজে নিয়ে যায়।

আজকের ICPC Dhaka Regional Final এ ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারকারীদের জন্য ছিল যথাক্রমে ৭৫০০০ টাকা, ৬০০০০ টাকা ও ৪৫০০০ টাকার প্রাইজমানি। ভবিষ্যতে এই পুরস্কারের পরিমান আরো অনেক বাড়বে বোঝাই যাচ্ছে, যে হারে এখনকার কন্টেস্টগুলোতে স্পন্সর পাওয়া যায়! টাকার কথা কেন বললাম? গর্ব বা শুনানোর জন্য কিংবা লোভ দেখানোর জন্য না, বরং অনুপ্রেরনার জন্য। প্রথম যখন আমরা কন্টেস্টে যেতাম, তখন এত কিছু ছিল না, উপস্থিতিটাই আমাদের কাছে অনেক বেশী ছিল। আর এখন বোঝাই যায় উত্তেজনাটা কি পরিমানে বেড়েছে। প্রথম দিকে দেখতাম প্রিলিমিনারি রাউন্ডে অংশ নিত ২০০-৩০০ টীম। আর এইবার ছিল ১০০০ এরও বেশী টীম! ভাবা যায়? ভবিষ্যতে আরো গুনিতক/সূচক আকারে বাড়বে।

বাহিরের দেশে প্রোগ্রামিং কন্টেস্টের আরেক নাম হচ্ছে “স্পোর্টস প্রোগ্রামিং”। বাংলাদেশেও এটা হয়ে যাচ্ছে, বিজয়ীদের হাতে বড় বড় পে-চেক দেখলে তাই মনে হয়। সর্বোপরি, এইটাও এক ধরণের খেলা। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মানুষ শুধুমাত্র “সাব্বিরের ছক্কা” আর “রুবেলের বোল্ড” দেখলেই উল্লাস করবে না। BUET, SUST, JU এর মত ভার্সিটিরা যখন ICPC World Final এ গিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে আসবে তখন দেশবাসী বিভিন্ন যায়গায় মিছিল বের করবে। জানি স্বপ্ন, তারপরেও দেখতে দোষ কি? বলে রাখা ভাল এই “স্পোর্টস প্রোগ্রামিং” এ আমরা বরাবর ইন্ডিয়াকে হারিয়ে আসছি গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে। আর পাকিস্তানের কোন টীমকে এখন পর্যন্ত নজরে পরেনি। :3

সম্মানিত কায়কোবাদ স্যার কিছুদিন আগে IUT তে বলেছিলেন, “ক্রিকেট খেলায় আন্দাজে ব্যাট চালালে ছক্কা হতে পারে, আন্দাজে বল মারলে আউট ও হতে পারে। কিন্তু কন্টেস্ট প্রোগ্রামিং এ ১০০ তে ১০০ ভাগ কোড হলেই কেবল সেইটা ACCEPTED হতে পারে। কাজেই এইটা দক্ষতার সাথেও ভাগ্যের খেলা না, এইটা শুধুমাত্রই দক্ষতার খেলা!”

stolen from my old Facebook post